ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

১৩ দস্যু বাহিনীর আত্মসমর্পণ আজ

নিউজ ডেস্ক ::  কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকাজুড়ে বিচরণ রয়েছে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনীর শত শত সশস্ত্র সদস্য। জল ও স্থলে সমান তালে চলে তাদের দস্যুতা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম। এ অবস্থায় গত বছরের ২০ অক্টোবর প্রথম দফায় ৪৩ জলদস্যু আত্মসমর্পণের পর আজ ২৩ নভেম্বর (শনিবার) ১৩ দস্যু বাহিনীর আরও শতাধিক জলদস্যু আনুষ্ঠনিক ভাবে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে। সকালে মহেশখালীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ প্রধানের হাতে অস্ত্র ও গুলি জমা দিয়ে সন্ত্রাসীরা আত্মসমর্পণ করবেন। এবার মহেশখালী ছাড়াও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসীরা আত্মসমর্পণ করবে বলে জানাগেছে। রাত ১২ টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মোট ৯৬ জন আত্মসমপর্ণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেফহোমে এসেছে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি সুন্দরবনে একের পর এক জলদস্যু বাহিনী আত্মসমর্পণ করে স্বভাবিক জীবনে ফিরে আসার ঘটনায় উদ্ভুদ্ধ হয় কক্সবাজারের উপকূলীয় জলদস্যু গ্রুপগুলো। এ নিয়ে কক্সবাজারের উপকূলীয় জলদস্যু বাহিনীগুলোর সদস্যদের স্বভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। গত বছরের ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে র‌্যাবের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় প্রথম আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান। সেবার মহেশখালী-কুতুবদিয়ার ৬টি জলদস্যু গুপের ৪৩ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করেন। মহেশখালী পৌর সদরের একটি স্কুল মাঠে আয়োজিত এক আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামন খাঁন কামালের হাতে অত্যাধুনিক এসএমজিসহ ৯৪টি বন্দুক ও ৮ হাজার রাউন্ড গুলি জমা দিয়ে তারা আত্মসমর্পণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার কক্সবাজার জেলা পুলিশের আয়োজনে মহেশখালীতে দ্বিতীয় দফায় সন্ত্রাসীদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান -কালারমার ছড়া বাজার মাঠে এবারের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সম্মানিত অতিথি হিসেবে থাকবেন পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন এর সভাপতিত্বে এ সভায় বিশেষ অতিথি থাকবেন কক্সবাজার-২ আসনের এমপি আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুখ ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে -আত্মসমর্পণ করা সন্ত্রাসীদেরকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হবে। তবে সন্ত্রাস ও দস্যুতার পথ পরিহার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য পুলিশ প্রশাসন ও সরকারের তরফ থেকে গতবারের মতো তাদেরকে সর্বোচ্চ আইনি সহায়তাসহ সার্বিক সহায়তা করা হবে।
এবার মহেশখালীতে এ আত্মসমর্পণের মধ্যস্ততা করছেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক আকরাম হোসেন। রাতে তিনি জানান- রাত ৮ টা পর্যন্ত প্রায় শতাধিক সন্ত্রাসী আত্মসমর্পণের জন্য জেলা পুলিশের সেফহোমে রয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
কালারমার ছড়া বাজার মাঠে আজকের সমাবেশকে ঘিরে ব্যপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের সন্ত্রাস বিরোধী ধারণা দিতে সমাবেশে উপকূলীয় এলাকার প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষের সমাগম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে লক্ষ্যে প্যান্ডেলও প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ব্যপারে কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফ জানান -অর্ধ লক্ষ মানুষের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন করে সমাবেশ স্থল প্রস্তুত করা হয়েছে। দু’দিন ধরে সমগ্র মহেশখালীতে মাইকিং প্রচারণা চালানো হচ্ছে -লোকজন যাতে সমাবেশে এসে সন্ত্রাস বিরোধী ধারণা পায়।
কুতুবদিয়া থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) দিদারুল ফেরদৌস জানান -কুতুবদিয়ার শীর্ষ জলদস্যু গ্রুপ গুরাকালু বাহিনীর প্রধান গুরাকালুসহ ৯ সন্ত্রাসী ইতোমধ্যে আত্মসর্পণের জন্য পুলিশের সেফহোমে চলে এসেছে। তাছাড়া প্রথম দফায় আত্মসমর্পণের পর থেকে এ পর্যন্ত কুতুবদিয়ায় শতাধিক জলদস্যু গ্রেফতার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে বিপুল অস্ত্র ও গুলি।
মহেশখালী থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) প্রভাষ চন্দ্র ধর জানান -এ আত্মসমর্পণের পর মহেশখালী সম্পূর্ণ সন্ত্রাসমুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আত্মসমর্পণ উপলক্ষে সমাবেশ সফল করার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
রাতে কক্সবাজার-২ আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, নাগরিক সুবিধার জন্য সরকার সব ধরণের সন্ত্রাস মোকাবিলায় আন্তরিক রয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় শান্তি ফেরাতে সরকার বদ্ধপরিকর। এ লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আশা করা হচ্ছে এ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কক্সবাজারে সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য অনেকাংশেই কমে আসবে।
জানাগেছে ইতোমধ্যে কালারমার ছড়ার আলোচিত জিয়া বাহিনীর জিয়াউর রহমান জিয়া। তার বাহিনীর সদস্য মানিক, আয়াতুল্লাহ, আব্দুস শুক্কুর, সিরিপ মিয়া, একরাম, নাজেম উদ্দিন, আয়ুব আলী, সিরাদোল্লাহ, সাদ্দাম, বশিরসহ অন্তত ১৫ জন। কালারমারছড়ার কালা জাহাঙ্গীর বাহিনীর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম, সদস্য আবুলু, সোনা মিয়া, জমির উদ্দীনসহ প্রায় ১৫ জন। সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে দস্যু জাহাঙ্গীর, সালাউদ্দিন। কালারমার ছড়ার নোনাছড়ি মোহাম্মদ আলী বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ আলী, সেকেন্ড ইন কমান্ড করিম ওরফে বদাইয়া, এরফান, রফিকসহ ১৫ জন। উত্তর নলবিলার মুজিব বাহিনীর প্রধান মজিবুর রহমান। হোয়ানকের শীর্ষ জলদস্যু ও অস্ত্র কারিগর আলোচিত আয়ুব আলী বাহিনীর প্রধান আয়ুব আলী। তার সঙ্গে চলে এসেছে তার বাহিনীর আরও ২০ সদস্য। কুতুবদিয়া উপজেলার লেমশীখালীর কালু বাহিনীর প্রধান মো. কালু প্রকাশ গুরা কালুসহ তার বাহিনীর ১৫-২০ জন।
সর্বশেষ তথ্যে রাতে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান -২৩ নভেম্বর (শনিবার) সকাল পর্যন্ত সন্ত্রাসীরা আত্মসমর্পণে তালিকাভুক্তি হওয়ার সুযোগ পাবে। যারা আত্মসমর্পণ করবে তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে নগদ অনুদান দেওয়া হবে। পরর্তিতে স্বভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য তাদেরকে চেকের মাধ্যমে আরও টাকা দেওয়া হবে অনুদান হিসেবে। এবার কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া ও চকরিয়ার জলদস্যুরা আত্মসমর্পণের সুযোগ পাবে। তাছাড়া বাঁশখালীর জলদস্যুরাও ইচ্ছা করলে আত্মসমর্পণ করতে পারবে। যারা এ সুযোগ পেয়েও আত্মসমর্পণ করবে না তাদের জন্য হুশিয়ারি উচ্চারণ করে পুলিশ সুপার বলেন – সে সব সন্ত্রাসীদের জন্য কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: